এই শিখনফল অর্জনের মাধ্যমে আমরা ভোল্টমিটার, অ্যাম্পিয়ারমিটার, অ্যাডোমিটার, ইলেকট্রনিক লীক ডিটেক্টর, ক্যাপাসিটর অ্যানালাইজার এবং ইলেকট্রিক কম্পোনেন্ট টেষ্ট করা সম্পর্কে জানব।
যে যন্ত্রের সাহায্যে কোন বৈদ্যুতিক রাশির পরিমান নির্ণয় করা হয়, তাকে পরিমাপক যন্ত্র বলে। এই পরিমাপ যন্ত্র যখন তড়িৎ প্রবাহের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, তখন তাকে বৈদ্যুতিক পরিমাপক যন্ত্র বলে। নিচে বৈদ্যুতিক পরিমাপক যন্ত্রের নাম ও কার্য প্রশানী দেখানো হল-
যে মিটারের সাহায্যে সরবরাহ লাইনের তড়িৎ চাপ (Voltage) সরাসরি মাপা যায়, তাকে ভোল্টমিটার বলে। ডোন্টমিটার লাইনের দুই ভারের (ফেজ ও নিউট্রাল) সাথে সংযুক্ত থাকে এবং ঐ দুই ভারের মধ্যে জড়িৎ বিভবের বৈষম্য (Potential Difference) কত ভোল্ট তা নির্দেশ করে। ভোল্টমিটারের কয়েলে চিকন তারের অধিক সংখ্যক প্যাঁচ থাকে বিধায় এর রেজিস্ট্যান্স খুব বেশী। ভোল্টমিটার দুই তারের সংঙ্গে প্যারালালে সংযুক্ত থাকে।
যে মিটারের সাহায্যে সরবরাহ লাইনের তড়িৎ (কারেন্ট) প্রবাহের পরিমাপ সরাসরি মাপা হয় তাকে অ্যাম্পিয়ার মিটার বলে। অ্যাম্পিয়ার মিটারের কয়েলের রেজিস্ট্যান্স বা রোধক খুব কম। অ্যাম্পিয়ার মিটার লাইনের সংঙ্গে সিরিজে সংযুক্ত থাকে, ফলে পুরো লাইন কারেন্ট মিটারের কয়েল দিয়ে প্রবাহিত হয়।
অ্যাম্পিয়ার মিটারের কয়েলের রেজিস্ট্যান্স খুব কম হওয়া দরকার, তা না হলে কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ার সময় মিটারে এতো বেশী ভোল্টেজ ড্রপ (V=IxR) বা তড়িৎ চাপের পতন ঘটবে যে, লোড সার্কিটে নির্দিষ্ট তড়িৎ চাপ (Voltage) অপেক্ষা অনেক কম ভোল্টেজে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাবে। তখন ৰাতি ঠিকমত জ্বলবে না বা অন্যান্য লোড ঠিকভাবে কাজ করবে না।
এই মিটার সার্কিটের ব্যবহার বা কানেকশন করার সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এই মিটার কখনও প্যারালালে সংযোগ করা যাবে না, কারণ মিটারের কয়েলটি খুব বেশী গরম হতে থাকবে এতে মিটারটি পুড়ে যেতে পারে।
বিভিন্ন রেঞ্জের মিটার বাজারে পাওয়া যায়। সার্কিটের কারেন্টের পরিমাণ আন্দাজ করেই সঠিক রেঞ্জের মিটার ব্যবহার করা হয়। যেখানে বড্ড অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট প্রবাহিত হবে সেখানে তার চাইতে একটু বেশী রেটিং এর মিটার ব্যবহার করা উচিত। সাধারণত মাইক্রো অ্যাম্পিয়ার থেকে শুরু করে কয়েক শত অ্যাম্পিয়ার রেঞ্জের মিটার পাওয়া যায়। একই মিটারে কয়েক রেঞ্জে কারেন্ট মাপারও ব্যবস্থা থাকে। সেক্ষেত্রে শুধু মিটারের নবকে সিলেক্ট করলেই হয়।
এ্যাভোমিটারের অপর নাম হচ্ছে মাল্টিমিটার। মাল্টি শব্দের অর্থ হচ্ছে একের অধিক। এ্যাভোমিটার দিয়ে একের বেশি ইলেকট্রিক রাশিকে পরিমাপ করা যায় বলে একে মাল্টিমিটারও বলা হয়।
AVO শব্দটি Amper এর প্রথম অক্ষর “A” Volt এর প্রথম অক্ষর " V" এবং Ohms এর প্রথম অক্ষর "O" এই তিনটি অক্ষর এর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। অর্থাৎ, এই মিটার দিয়ে কারেন্ট (অ্যাম্পিয়ার), ভোল্টেজ (ভোল্ট) এবং রেজিস্ট্যান্স (ওহম্স) পরিমাপ করা যায়।
এ্যাডোমিটার ব্যবহার করার নিয়ম
একে সাউন্ড লিক ডিটেক্টর বলা হয়। এটি ব্যাটারির সাহায্যে চলে । এর দু'টি অংশের একটি ফেক্সিবল সেন্সর প্ৰোৰ (Flexible Sensor Probe) এবং অন্যটি যতি। সেন্সরের অস্ত্রভাগে ইলেকট্রোড কেজ (Electrode Cage) থাকে। ইলেকট্রোড কেজের সর্বশেষাংশে টিশ প্রটেক্টর (Tip Protector) থাকে । ভালো ফল পাবার জন্য মাঝে মাঝে টিপ পরিষ্কার করতে হয়। কোন কোন সাউন্ড ডিটেক্টর ৪০-১০০ ডি.বি (Decibel) এর শব্দেও কাজ করতে পারে। একে সম্ভাব্য লিকের স্থানে ধরলে, নিক থাকলে নির্দেশ করতে পারে । মিটার বা লাইট শব্দ নিয়ন্ত্রন করে। আউটপুট জ্যাকের সাহায্যে শব্দ রেকর্ড করা হয় । মূলত লিকের স্থান থেকে বের হওয়া মানুষের শ্রবণশক্তির অনেক নিচেরক্টরের শব্দও এর সাহায্যে নির্দেশ করা সম্ভব। তাই সুক্ষ্ম লিক নির্ণরে এটি ব্যবহার করা হয়।
ক্যাপাসিটর অ্যানালাইজার দিয়ে ক্যাপাসিটর পরীক্ষা করা হয়। এর সাহায্যে ক্যাপাসিটরের বিভিন্ন রেটিং মান পরিমাপ করা যায়। দু'ধরনের অ্যানালাইজার ব্যবহৃত হয়ে থাকে । একটি সরল ও অপরটি জটিল প্রকৃতির ।
সরল প্রকৃতির ক্যাপাসিটর অ্যানালাইজার
এ ধরনের অ্যানালাইজার ব্যাটারির পাওয়ার দিয়ে চালানো হয়। এর সাহায্যে ক্যাপাসিটরের শুধু ক্যাপাসিট্যান্সের মান বের করা যায়। অ্যানালাইজারের বিভিন্ন অংশের নাম হলো- ১। ডিসপ্লে ২। রেঞ্জ নব ৩। পরেন্টার ৪। বডি ৫। প্রোব ইত্যাদি।
জটিল প্রকৃতির ক্যাপাসিটর অ্যানালাইজার
এ ধরনের অ্যানালাইজার বৈদ্যুতিক পাওয়ার দিয়ে চালানো হয়। এতে কয়েকটি সুইচ, স্কেল ও কর্ড থাকে। এর সাহায্যে ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিট্যান্স, পাওয়ার ফ্যাক্টরসহ সব রেটিং এর মান পাওয়া যায়। এর ব্যবহার পদ্ধতি বেশ জটিল। তাই এর নাম জটিল ক্যাপাসিটর অ্যানালাইজার। এ অ্যানালাইজার পাওয়ার কর্ড, টেস্ট কর্ড ও ক্লিপ, টেস্ট (অন-অফ) সুইচ, আই টিউব ভোল্ট রেঞ্জ সুইচ, রেঞ্জ সুইচ ইত্যাদি অংশ নিয়ে গঠিত। এর সাহায্যে ক্যাপাসিটরের যে টেস্টগুলো করা হয় তা হলো- Open Test, Short Test, মাইক্রোফ্যারাড মান নির্ণয়, পাওয়ার ফ্যাক্টর ইত্যাদি ।
থার্মাল ফিউজ : থার্মাল ফিউজের দুই টার্মিনালে মিটার প্রোণ ধরি । যদি কন্টিনিউটি দেখায় তাহলে বুঝতে হবে থার্মাল ফিউজটি ভালো আছে।
কুলিং ওভারলোড : ক্লিপ অন মিটারের সিলেটিং সুইচকে কন্টিনিউটি পজিশনে সেট করি এবং কুলিং ওভার লোডের দুই টার্মিনালে মিটার প্রোব ধরি । যদি স্বাভাবিক অবস্থায় কন্টিনিউটি না দেখার এবং কুলিং ওভারলোডটিকে বরফের ভেতর ডুবিয়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা তৈরি হওয়ার পর কন্টিনিউটি দেখার তাহলে বুঝতে হবে কুলিং ওভারলোডটি ভালো আছে।
ডোর ল্যাম্পঃ মিটার প্রোবকে ভোর ল্যাম্পের দুই টার্মিনাল (থ্রেড কন্টাক্ট ও ফুট কন্টাক্ট) ধরে যদি কন্টিনিউটি দেখায় তাহলে বুঝতে হবে ডোর ল্যাম্পটি ভালো আছে। কন্টিনিউটি না দেখালে বুঝতে হবে ডোর ল্যাম্পটি নষ্ট আছে।